ডেঙ্গুতে বেশি মারা যাচ্ছেন ১৬-৪০ বছর বয়সীরা

Date:

ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই। প্রকাশিত আংশিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ১৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষ ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছেন। ডেঙ্গুতে পুরুষ আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু বেশি নারীর। আক্রান্ত মানুষের ৪০ শতাংশ ঢাকা শহরের বাইরের।

গতকাল সোমবার সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা শহরের হাসপাতালে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে ১৮৫ জনের মৃত্যু হলো। দেশের ইতিহাসে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যু। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত বছর। গত বছর মারা গিয়েছিল ২৮১ জন। ১০০ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছিল ২০২১ ও ২০১৯ সালে। ওই দুই বছর মারা গিয়েছিল যথাক্রমে ১০৫ জন ও ১৭৯ জন।

১৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী মোট ২০ হাজার ৫৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা মোট রোগীর ৫৮ শতাংশ। এই বয়সী রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ৮৬ জন। এটি মোট মৃত্যুর ৪৬ শতাংশ।

হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীফাইল ছবি

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ঢাকা শহরের ২০টি সরকারি হাসপাতালের এবং ৫১টি বেসরকারি হাসপাতালের ডেঙ্গুর তথ্য দিয়েছে। এ ছাড়া আট বিভাগের সরকারি সব হাসপাতালের তথ্য দিয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও দিয়েছে। যদিও সব বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য সরকারি তালিকায় নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে সরকারি হাসপাতাল ৬৩৯টি। সরকারি সব হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য অধিদপ্তর প্রকাশ করছে। আর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে ৪ হাজার ৭০৬টি।

আরও পড়ুনঢাকার ১১টি এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগী বেশি আসছেন

সরকারি হাসপাতালে সাধারণত সমাজের দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের একটি অংশ চিকিৎসা নেয়। মধ্যবিত্তের বাকি অংশ, উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত চিকিৎসা নেয় মূলত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) রাশেদা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেন নিয়মিত তথ্য দেয়, তার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। ডেঙ্গুর তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। শিগগিরই সব হাসপাতাল এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে।’

আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্যে নারী ও পুরুষের মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। মৃত্যুর ক্ষেত্রে নারী ৫৭ শতাংশ আর পুরুষ ৪৩ শতাংশ।

তরুণেরা ঝুঁকিতে

গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ৩৫ হাজার ২৭০ জন রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের পাঁচ বছর অন্তর বয়স বিভাজনভিত্তিক তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৬–২০, ২১–২৫, ২৬–৩০, ৩১–৩৫ ও ৩৬–৪০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুও বেশি।

১৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী মোট ২০ হাজার ৫৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা মোট রোগীর ৫৮ শতাংশ। এই বয়সী রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ৮৬ জন। এটি মোট মৃত্যুর ৪৬ শতাংশ।

ডেঙ্গু রোগীর চাপে অন্য রোগীর চিকিৎসা বিঘ্নিত হচ্ছে। এটি শিশু হাসপাতালেও যেমন সত্যি, তেমনি সোহরাওয়ার্দী বা মুগদা হাসপাতালেও সত্যি। এমন হওয়ার কথা ছিল না, আমরা কেউ এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ

আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্যে নারী ও পুরুষের মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। মৃত্যুর ক্ষেত্রে নারী ৫৭ শতাংশ আর পুরুষ ৪৩ শতাংশ।

নারী ও পুরুষের মধ্যে এই পার্থক্যের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে জনস্বাস্থ্যবিদদের একটি অংশ মনে করেন, নারীদের হাসপাতালে আনতে তুলনামূলকভাবে বেশি বিলম্ব হয়। আর সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, যাঁরা বিলম্বে হাসপাতালে আসছেন, তাঁদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে।

আরও পড়ুনডেঙ্গু প্রতিরোধে কেবল প্রচারে জোর, মশকনিধনে নজর নেই

অন্য শিশুর সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট দেশের শিশুরোগ চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল। সারা দেশের জটিল শিশু রোগীদের এই হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৬৮১টি। হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ড ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য বরাদ্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। এই ওয়ার্ডে শয্যা ৪২টি।

আরও পড়ুনডেঙ্গু নিয়ে সতর্কবার্তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

গতকাল হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ৭০টি ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি। এর মধ্যে ২৮টি শিশুকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সঙ্গে রেখে চিকিৎসা দেওয়া চলছিল। হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের কারণে অন্য শিশুরা বাড়তি সমস্যার মধ্যে পড়েছে। তাদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়েছে।

বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেন নিয়মিত তথ্য দেয়, তার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। ডেঙ্গুর তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। শিগগিরই সব হাসপাতাল এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) রাশেদা সুলতানা

অন্য ধরনের সমস্যা দেখা গেল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের ছয়তলায় নিউরোলজি বিভাগে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর চাপে অন্য রোগীর চিকিৎসা বিঘ্নিত হচ্ছে। এটি শিশু হাসপাতালেও যেমন সত্যি, তেমনি সোহরাওয়ার্দী বা মুগদা হাসপাতালেও সত্যি। এমন হওয়ার কথা ছিল না, আমরা কেউ এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Popular

More like this
Related

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার

সাকিল আহমেদ হলেন একজন বাংলাদেশী ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ এবং...

জামালপুরে যমুনায় নিখোঁজ সেই আপন পেল জিপিএ-৫

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় যমুনা নদীতে নৌকায় সেলফি তুলতে গিয়ে...

এসএসসির ফল প্রকাশের দিনেও ঢাকায় মিষ্টির ব্যবসায় মন্দা, কারণ রাজনৈতিক সমাবেশ

পয়লা বৈশাখ, পবিত্র ঈদুল ফিতর, এসএসসি ও এইচএসসির ফল...

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘পরিচ্ছন্ন নোট নীতিমালা’ জারি, কী আছে এ নীতিমালায়

মানুষের হাতে ও বাজারে যে টাকার নোট ব্যবহৃত হচ্ছে,...